এ বারে সুন্দরবনের আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা চালাতে চলেছে ইসরো। সুন্দরবন কৃষ্টিমেলা ও লোক সংস্কৃতি উত্সবের মঞ্চে ইসরোর কলকাতা ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার দিব্যেন্দু দত্ত এ কথা জানান। খুব শীঘ্রই সুন্দরবনে সেই আবহাওয়া গবেষণার কাজ শুরু হবে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১০২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে সুন্দরবন। যার মধ্যে ৫৪টি দ্বীপে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের বাস। আয়তন ৯৬৩০ বর্গকিলোমিটার। ভারতে সুন্দরবনের পূর্বদিকে রায়মঙ্গল, কালিন্দী ও ইছামতী নদী এবং পশ্চিমে হুগলি নদী। উত্তরে জাম্পিয়র হজেস লাইন এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ২১.৩২ ডিগ্রি উত্তর থেকে ২২.৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা এবং ৮৮.৫ ডিগ্রি পূর্ব থেকে ৮৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা রেখায় সুন্দরবন অবস্থিত। বলা যায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের নিত্যসঙ্গী। আয়লার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখনও সুন্দরবনের মানুষের টাটকা স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কিন্তু এমন দুর্যোগের কবলে পড়ার আগেই যাতে মানুষ সতর্ক হয়, সে কারণে এ বার উদ্যোগী হয়েছে ইসরো।
দিব্যেন্দুবাবু জানান, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় ১১টি স্বয়ংক্রিয় স্যাটেলাইট ওয়েদার স্টেশন গড়বে ইসরো। আপাতত সুন্দরবনের ১১টি দ্বীপকে বেছে নিয়ে ২৫-৩০ ফুট উঁচু টাওয়ার তৈরি করা হবে। সেখানে বসানো থাকবে ৭টি বা ১০টি করে উন্নতপ্রযুক্তির সেন্সর। যে সেন্সরের মাধ্যমে আবহাওয়ার পরিবর্তন বোঝা যাবে। যা মাত্র ৩০ মিনিট অন্তর মোবাইল, বেতার এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এমনকী, এই টাওয়ারগুলি থেকে খবর পৌঁছবে ইসরোর আমেদাবাদের মূল দফতরেও। সেখান থেকেই বিশ্লষণ করা সম্ভব হবে আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি। এতে কৃষক থেকে শুরু করে মত্স্যজীবী সকলেই উপকৃত হবেন। তা ছাড়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসার পূর্বাভাস জানতে পারলে মানুষ সাধ্যমতো তাঁর জীবন জীবিকা রক্ষা করার চেষ্টা করবে। এক কথায়, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ সুন্দরবনবাসীর কাছে আশীর্বাদ হতে চলেছে। যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জীবন-জীবিকা ও সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা পরিবর্তন করার সুযোগ থাকছে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নে সুন্দরবনবাসী অনেক বেশি সুবিধা পেতে চলেছেন।
এ প্রসঙ্গে দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের আবহাওয়া-সংক্রান্ত ডেটা ব্যাঙ্ক থাকলেও সুন্দরবনের আবহাওয়া-সংক্রান্ত কোনও ডেটা ব্যাঙ্ক ছিল না। এ বার সেটা হবে। তা ছাড়া, ইসরো রাজস্থান, কেরল, গুজরাট-সহ বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় কাজ করছে। তবে আবহাওয়া গবেষণার ব্যাপারটি সুন্দরবনে প্রথম।” সুন্দরবন কৃষ্টি মেলা ও লোক সংস্কৃতি উত্সবের চেয়ারম্যান লোকমান মোল্লা বলেন, “জীবন যেখানে অনিশ্চিত, মৃত্যু যেখানে প্রতি মুহূর্তে হাতছানি দেয়, সেখানে এ ধরনের উদ্যোগ এক ঐতিহাসিক নজির বললে ভুল হবে না।” anandabazar
No comments:
Post a Comment