ওজন বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় অনেকেই মনভরে বা সন্তুষ্টি নিয়ে খেতে পারেন না। তাঁদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। তাঁদের দাবি, খাবারের সঙ্গে একটি বিশেষ রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে দিলে তা অল্প খেলেই মন ভরে খাওয়ার অনুভূতি পাওয়া যাবে। ফলে শরীরে বাড়তি ক্যালরি যোগ হয়ে স্থূলতার সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। তাঁরা সেই রাসায়নিক উপাদানটি তৈরিও করেছেন।
আইপিই নামের ওই রাসায়নিক উপাদানসমৃদ্ধ খাবার পরিমিত খেলে পূর্ণ সন্তুষ্টি মিলবে। ফলে থাকবে না ওজন বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা। আইপিই হচ্ছে প্রোপিয়নেট বা প্রোপানয়েট নামক লবণের গুঁড়া। সাধারণত জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মানুষের অন্ত্রে খাবারের উপাদানগুলো ভেঙে প্রোপিয়নেট তৈরি হয়। এটি একধরনের হরমোন নিঃসরণ ঘটাতে সহায়তা করে, যার প্রভাবে মানুষের মনে হয় যথেষ্ট পরিমাণ খাওয়া হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, কম খেয়েও পূর্ণ খাওয়ার অনুভূতি পাওয়ার জন্যই নিয়মিত আইপিই মেশানো খাবার খেতে হবে। প্রাথমিক কয়েকটি পরীক্ষায় এ ব্যাপারে প্রমাণ মিলেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রোপিয়নেটের মতো লবণভিত্তিক রাসায়নিক উপাদান মানুষের ক্ষুধার নিয়ন্ত্রক হরমোনের নিঃসরণ ঘটিয়ে খাবার গ্রহণ কমায় ঠিকই, তবে শরীরের বড় পরিবর্তন চাইলে আইপিইর পাশাপাশি বেশি করে আঁশ-জাতীয় খাবার খেতে হবে।
যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক খাবারে সন্তুষ্টি দেওয়ার উপযোগী রাসায়নিক উপাদান আইপিই নিয়ে গবেষণা করেছেন। এতে নেতৃত্ব দেন ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের শিক্ষক গ্যারি ফ্রস্ট। তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী গাট।
গবেষকেরা বলছেন, আইপিইর স্বাদ অনেকটা ময়দার মতো এবং এটি সহজেই পানিতে দ্রবীভূত হয়। বর্তমানে এটি রুটি এবং ফলজাত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে একীভূত করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রোপিয়নেটভিত্তিক রাসায়নিক দ্রব্য আইপিইকে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই অন্ত্রে পাঠানোর কাজটি তাঁদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল। আইপিই অন্ত্রে গিয়ে মানুষের খাবার খাওয়ার পূর্ণতার অনুভূতির জন্য দায়ী হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। সরাসরি খাবারে দ্রব্যটি ব্যবহার করা হলে তা হরমোন নিঃসরণ ঘটানোর আগেই অন্ত্রে শোষিত হয়ে যায়। তাই রাসায়নিক উপাদানটিকে ইনুলিন নামক শর্করা উপাদানের (কার্বোহাইড্রেড) সঙ্গে মেশানো হয়। ওই কার্বোহাইড্রেডটি প্রাকৃতিকভাবে গাছপালার মধ্যে পাওয়া যায়।
প্রাথমিকভাবে ২০ জনের একটি দলের ওপর আইপিইর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। কয়েকজনকে খেতে দেওয়া হয় শুধু ইনুলিন আর বাকিদের আইপিই। পরে তাঁদের একসঙ্গে অনেক খাবার (বুফে) দিয়ে যতটা ইচ্ছা খাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, আইপিই গ্রহণকারী ব্যক্তিরা ১৪ শতাংশ কম খেয়েছেন।
পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৯ জন স্থূল শারীরিক গঠনের ব্যক্তিকে নেওয়া হয়। এঁদের ২৫ জনকে দেওয়া হয় আইপিই গুঁড়া। বাকি ২৪ জনকে দেওয়া হয় শুধু ইনুলিন। প্রতিদিনের খাবারে এক চামচ (১০ গ্রাম) করে এসব উপাদান মিশিয়ে নিতে বলা হয়। ২৪ সপ্তাহ পর দেখা যায়, ইনুলিন মেশানো খাবার খেয়ে ২৪ জনের ৩ শতাংশ ওজন বেড়েছে। অপরদিকে আইপি মেশানো খাবার খেয়ে ওজন বেড়েছে ২৫ জনের মধ্যে মাত্র একজনের।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষক গ্যারি ফ্রস্ট বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিবছর গড়ে ৩০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজন বাড়ে। এটি রোধে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডগলাস মরিসন বলছেন, আইপিই নিয়ে পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে ওজন নিয়ন্ত্রণে প্রোপিয়নেটের বড় ভূমিকা রয়েছে।
আর খাবারের স্বাদে কোনো পরিবর্তন এবং অন্ত্রের কোনো ক্ষতি না করে আইপিই যদি ওজন কমাতে কার্যকর হয়, তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের স্থূলতাবিষয়ক সংগঠন ন্যাশনাল ওবেসিটি ফোরামের প্রধান ডেভিড হ্যাসলাম।
সূত্র: বিবিসি।
No comments:
Post a Comment