Tuesday, 16 December 2014

জীবনে ছোট ছোট লক্ষ্যের আটটি লাভ


http://alochonaa.files.wordpress.com/2014/01/aim_of_life.jpgকথায় বলে বিন্দুতে সিন্ধু হয়। অর্থাৎ বিন্দু বিন্দু জল জমেই তৈরি হয় সাগর৷ আমাদের জীবনের সঙ্গেও এর অনেকটা মিল রয়েছে৷ ভাবছেন তো কীভাবে? তাহলে উত্তরটা দিয়েই দিই৷ জীবনে সবসময় বড় বড় লক্ষ্য আর উচ্চাশা বজায় রাখার বদলে যদি একটু পাল্টানো যায় চলার পথটা, তাহলে কেমন হয়? মানে সবসময় উঁচু স্বপ্নপূরণের দিকে না ছুটে যদি ছোট ছোট কিছু টার্গেটকে সামনে রেখে এগিয়ে চলা যায়, তাহলে জীবন হয়ে উঠবে অনেক সহজ৷
প্রায়শই আমরা বড় কোনও কিছু পেতে জীবনের ছোট ছোট ব্যাপারগুলোকে তুচ্ছ জ্ঞান করি৷ কিন্তু কেন এইসব ছোট ছোট লক্ষ্যগুলোই আমাদের চলার পথে এত গুরুত্বপূর্ণ, আসুন সেই বিষয়েই এখন জেনে নিই কিছু তথ্য-
১. বড় ভুল হওয়া আটকানো যায়- জীবনে হঠাৎ করে যখন কোনও ব্যাপারে ব্যর্থ হই বা অসাফল্য আমাদের ঘিরে ধরে, তখন আমরা কার্যতই ভেঙে পড়ি৷ কিন্তু কখনও কি তলিয়ে ভেবেছি এই বড় ভুলের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও কত ছোট ছোট পুরনো ব্যর্থতা, যেগুলো আমরা একসময় দেখেও দেখিনি৷ আর সেখান থেকেই সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু যদি এইসব ছোট ছোট ভুলগুলোকে আমরা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করতাম তাহলে কে জানত জীবনটা আজকে অন্যরকম হতে পারত! তাই চলার পথে এইসব ছোট ছোট ঘটনা, লক্ষ্য আর তা থেকে উপলব্ধিই জীবনের চলার পথকে মসৃণ করবে৷
২.সময় ও পরিশ্রম কম লাগে- প্রায়শই আমরা জীবনে খুব তাড়তাড়ি সাফল্য চাই৷ আর শর্ট টার্ম গোল মানে জীবনের ছোট ছোট লক্ষ্যপূরণে এইসব সাফল্য খুব সহজেই আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসে৷ কম দিনে কাজ ঠিকঠাক সেরে ফেলতে পারলেই সাফল্যও আসবে, সঙ্গে বাড়বে আত্মবিশ্বাসও৷ ফলে পরবর্তী লক্ষ্যের দিকে সহজেই এগোতে পারব৷ আর সবচেয়ে বড় কথা এতে কম সময়ে ও শ্রমে কাজ সেরেও ফেলা যায়৷ নিজেকে খুশি রাখার এটা কিন্তু অব্যর্থ দাওয়াই৷ সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় চারপাশের পরিস্থিতির উপরও৷
৩. ফোকাসড থাকা যায়- আমাকে ইঁদুরদৌড়ে সামিল হতে হবেই ভেবে যদি আমরা এমন কোনও কাজে হাত দিয়ে ফেলি, যা আমাদের আয়ত্তের বাইরে, তাহলে আমাদের অবসাদ বাড়বে বই কমবে না৷ ফলে মাঝপথে গিয়ে কাজের ইচ্ছে হয় কমে যাবে, নয়তো আমরা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে কাজটাই ছেড়ে দেব৷ কিন্তু শুরুতেই যদি আমরা এই বড় কাজটাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে নিই,তাহলে আমাদের মানসিকচাপটা অনেকটাই কমে৷ কারণ তাতে আমরা শুধু কয়েকটি বিশেষ ব্যাপারেই ফোকাসড থাকি৷
৪. ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন- জীবনে আমরা কী চাই তা নিয়ে সকলেরই অনেক পরিকল্পনা থাকে৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অনেক সময়েই তা বাস্তবায়িত হয় না৷ তাই বছরের শুরুতেই কী কী কাজ সারা বছর ধরে করতে চান, তার একটা লিস্ট করে নিন৷ প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা জমানো বা রোজ পাঁচজনের রান্নার মতো টার্গেটকে না রেখে, উইকএন্ডে ডিনার প্ল্যান, ওয়ার্ডরোব পরিষ্কার, প্রতিদিন পাঁচটাকার কয়েন জমানোর মতো ব্যাপারগুলোকে রাখুন আপনার প্রায়োরিটি লিস্টে৷
৫.টাইম ম্যানেজমেন্টেও সহায়ক- চেষ্টা করুন প্রতিদিন সকালে উঠেই একটা রুটিন তৈরি করে নিতে৷ আর সেই অনুযায়ী সন্ধে ছ’টা-সাতটার মধ্যে সমস্ত কাজ সেরে ফেলতে৷ সুতরাং বেশি খাটনিও পড়বে না, আর আপনিও বুঝতে পারবেন আপনাকে কীভাবে কতটা কাজ করতে হবে৷ আর ছোট ছোট লক্ষ্যগুলোতে টাইম ম্যানেজমেন্টটাও খুব সহায়ক৷
৬. বাড়বে সৃজনশীলতা- ছোট ছোট লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে আমাদের মানসিক চাপটা স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে৷ আর তাতে একদিকে যেমন মনে শান্তি থাকে, তেমনই বাড়ে ক্রিয়েটিভিটি৷ পরবর্তী কাজের জন্য আমরা নতুন নতুন কিছু পরিকল্পনা করতে পারি৷
৭. ভবিষ্যতে উৎসাহ বাড়াবে- মানছি জীবনে ছোট ছোট কাজ করে কখনওই চরম সাফল্যর শিখর ছোঁওয়া যায় না৷ কিন্তু এইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজগুলোই পরবর্তীকালে কোনও বড় কাজ করতে আমাদের উৎসাহিত করে৷ আর বাড়ে আপনার দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাসও৷ তাই লরেন্স জে পিটার বোধহয় ঠিকই বলেছিলেন, আপনি চলতে চলতে না জানেন কোথায় যাচ্ছেন, তাহলে যেখানে আছেন সেখানেই থেমে যান৷ আর ছোট ছোটপদক্ষেপ ফেলুন৷ লক্ষ্য ঠিক পেয়ে যাবেন৷
৮. সময় নষ্ট হবে না- কবে জীবনে বড়সড় সাফল্য আসবে তার জন্য অযথা সময় নষ্ট না করে ছোট ছোট ব্যাপারে নজর দিন৷ ভবিষ্যতে অন্তত সময় নষ্ট হওয়ার আফশোসটা তো থাকবে না৷

No comments:

Post a Comment