চলতি মরসুমে খানিকটা ব্যতিক্রমী ভঙ্গিতেই
শুরু করেছিল শীত৷ নভেম্বরে টানা তিন দিন ১৪ ডিগ্রি ছুঁয়ে ছিল
আলিপুরের পারদ৷ ডিসেম্বরে সেখানে মাত্র একদিন ১৫ ডিগ্রির নীচে
নেমেছে রাতের তাপমাত্রা৷ নামেনি দিনের তাপমাত্রাও৷ ফল , ঠান্ডার
আমেজে মন খারাপ করা ঘাটতি৷ দিনে তো জ্যাকেট -সোয়েটার লাগছেই না ,
সূর্য ডোবার পরও গরম জামা না -পরে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে শহুরে
আমজনতা৷ ঠান্ডা কিছুটা মালুম হচ্ছে মফস্সলে ঢুকলে৷
কেন এমন
দুরবস্থা শীতের ?আবহবিদদের বক্তব্য সোজা কথায় বললে দাঁড়ায় , গার্সিয়া
-ফিকরুরা ভালো না -খেলায় আতলেতি যেমন ডুবেছে , ঠিক সে ভাবেই
ডোবাচ্ছে শীতের চরিত্ররা৷ ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমি ঝঞ্ধা ভারতে ঠান্ডা
পড়ানোর আসল কারিগর৷ নভেম্বরের মাঝামাঝি তার আনাগোনা বাড়লেও , হঠাত্
তা প্রায় বন্ধ৷ এমনিতে হাড় -হিম ঠান্ডা পড়ার অনুকূল পরিবেশ হল ,
জলীয় বাষ্প বয়ে এনে কাশ্মীর -হিমাচলের পাহাড়ে তুষারপাত ঘটাবে
ঝঞ্ধা৷ সে সরে গেলেই তুষারছোঁয়া হাওয়া নেমে আসবে উত্তর ভারতের
সমতলে৷ মধ্য ভারতের উপর সক্রিয় উচ্চচাপ বলয় সেই হিমেল বাতাসকে
ঠেলে দেবে বাংলা -বিহার -ওডিশার পথে৷ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ , ঘূর্ণিঝড়
না -থাকলে শুকনো হাওয়া বাধাহীন ভাবে ঢুকতেই থাকবে৷ নামবে
তাপমাত্রা৷
এ বছর নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর একেবারে
শান্ত৷ ঘূর্ণিঝড় নেই, নেই মামুলি নিম্নচাপও৷ সেই সুযোগেই রাজপাট শুরু
হয়ে গিয়েছিল ঠান্ডা হাওয়ার৷ গোল বাঁধল অন্য জায়গায়৷ পশ্চিমি
ঝঞ্ধা সংখ্যায় কমে আসায় একসময় ঠান্ডা হাওয়ার দমক কমতে শুরু করল৷
যে ক’টা এল , সেগুলিও তেমন একটা জোরালো নয়৷ যে কারণে দিল্লি -সহ
উত্তর ভারতেও এ বার ঠান্ডার তীব্রতা বেশ কম৷ দুর্বল ঝঞ্ধা আসায়
বিপদ বাড়ল আরও৷ তুষারপাত তেমন হল না , উল্টে ঝঞ্ধার ধাক্কায় মধ্য
ভারতের উচ্চচাপ বলয় সরতে সরতে সেই পূর্ব উপকূলেই রয়ে গেল৷ যা
ক্রমাগত জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাজুড়ে কুয়াশার দাপট৷ রক্ষা
নেই দিনেও৷ মেঘ -মেঘ আকাশ৷ ফলে সন্ধের পর ভূপৃষ্ঠের তাপ বেরোতে না
-পারায় থমকে যাচ্ছে পারাপতন৷ বুধবার কাশ্মীরের উপর থেকে একটি
দুর্বল ঝঞ্ধা সরতে শুরু করেছে৷ ওডিশা উপকূলে তাই এখনও দাঁড়িয়ে
উচ্চচাপ বলয়৷ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় উত্তরবঙ্গে
ঘন কুয়াশার সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস৷ কুয়াশার দাপট বাড়বে
কলকাতা -সহ দক্ষিণবঙ্গেও৷ যার অর্থ, আগামী ২-৩ দিন কলকাতার
তাপমাত্রা ১৫ -১৬ ডিগ্রির নীচে নামার প্রায় কোনও সম্ভাবনাই নেই৷
উল্টে সন্তাহশেষে আরও ঊর্ধ্বমুখী ছুট লাগাবে পারদ৷ কেন ?আলিপুর
আবহাওয়া দন্তরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা , ‘শুক্রবার
নাগাদ কাশ্মীরের উপর একটি সক্রিয় ঝঞ্ধা চলে আসবে৷ তার প্রভাবে
গুজরাট -রাজস্থানের উপর একটি ঘূর্ণাবর্তও সৃষ্টি হবে৷ এই ঘূর্ণাবর্ত
যত দিন থাকবে , তত দিন উচ্চচাপ বলয় উপকূলেই থেকে যাবে৷ ফলে জোলো
বাতাস ঢুকতেই থাকবে৷ এক্ষেত্রে ঝঞ্ধার টেনে আসা পশ্চিমি বাতাস আর
পুবালি হাওয়ার সংঘর্ষে উত্তর ও মধ্য ভারতে বৃষ্টিবাদলার সম্ভাবনাও
থাকছে৷ যার অর্থ, সন্তাহশেষে ঠান্ডা হাওয়ার প্রবাহ একেবারেই
শক্তিশালী থাকবে না৷ ’অবশ্য ঝঞ্ধার প্রভাবে কাশ্মীরে নতুন করে
তুষারপাতের সম্ভাবনা৷ অর্থাত্, ঝঞ্ধা সরে গেলেই হিম -হাওয়ার দমক
ফেরার কথা৷ কিন্ত্ত এক্ষেত্রে তেমনটা হতে সময় লাগবে৷ গোকুলবাবুর
কথায় , ‘ঝঞ্ধার প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তটি পূর্ব ভারতের দিকে সরে
আসতে চাইবে৷ উচ্চচাপটিও উপকূল থেকে মধ্য ভারতে স্বস্থানে ফিরতে
চাইবে৷ এই মুখোমুখি লড়াই যত দিন চলবে , বাংলায় জাঁকিয়ে শীত পড়া তত
পিছিয়ে যাবে৷ ’বৃষ্টিবাদলা থেমে আকাশ পরিষ্কারের অপেক্ষায় থাকবে
শীত৷ শীতবিলাসী বাঙালিও৷
মহানগরে পারদের নামা
-ওঠা২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০১২৩৪৫৬৭৮৯১০নভেম্বরডিসেম্বর১৪১৫১৬১৭১৮১৬ .০১৪ .৯১৪ .১১৪
.৬১৫ .২১৫ .৮১৬ .৪১৬ .১১৬ .৯১৪ .৭১৫ .৪১৭ .৪১৭ .৯১৭ .৫১৫ .১১৫ .৭১৫
.৫আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷
|
|
No comments:
Post a Comment