Thursday 11 December 2014

শিয়রে ঝঞ্ঝা, মাঝ -ডিসেম্বরেও খাবি খাবে শীত

Ei Samay 
 শীতের হলটা কী ? পৌষ যত এগিয়ে আসছে , ঠান্ডার কামড় যেন তত কমছে৷ অথচ , কী সাড়া জাগিয়েই না অগ্রহায়ণের শুরুতে কলকাতায় হাজির হয়েছিল শীত !ঠিক যেন আতলেতিকো কলকাতার আর এক সংস্করণ৷ আইএসএল -এ ফাটাফাটি শুরু করেছিল সৌরভের টিম৷ জৌলুস হঠাত্ করেই পড়তির দিকে৷ আতলেতি তা-ও কেঁদে -ককিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে , শীতের জাঁকিয়ে বসার কোনও ইঙ্গিতই কিন্ত্ত নেই৷ বরং পূর্বাভাস বলছে , মাঝ -ডিসেম্বরেও খাবি খাবে শীত৷
চলতি মরসুমে খানিকটা ব্যতিক্রমী ভঙ্গিতেই শুরু করেছিল শীত৷ নভেম্বরে টানা তিন দিন ১৪ ডিগ্রি ছুঁয়ে ছিল আলিপুরের পারদ৷ ডিসেম্বরে সেখানে মাত্র একদিন ১৫ ডিগ্রির নীচে নেমেছে রাতের তাপমাত্রা৷ নামেনি দিনের তাপমাত্রাও৷ ফল , ঠান্ডার আমেজে মন খারাপ করা ঘাটতি৷ দিনে তো জ্যাকেট -সোয়েটার লাগছেই না , সূর্য ডোবার পরও গরম জামা না -পরে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে শহুরে আমজনতা৷ ঠান্ডা কিছুটা মালুম হচ্ছে মফস্সলে ঢুকলে৷
কেন এমন দুরবস্থা শীতের ?আবহবিদদের বক্তব্য সোজা কথায় বললে দাঁড়ায় , গার্সিয়া -ফিকরুরা ভালো না -খেলায় আতলেতি যেমন ডুবেছে , ঠিক সে ভাবেই ডোবাচ্ছে শীতের চরিত্ররা৷ ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমি ঝঞ্ধা ভারতে ঠান্ডা পড়ানোর আসল কারিগর৷ নভেম্বরের মাঝামাঝি তার আনাগোনা বাড়লেও , হঠাত্ তা প্রায় বন্ধ৷ এমনিতে হাড় -হিম ঠান্ডা পড়ার অনুকূল পরিবেশ হল , জলীয় বাষ্প বয়ে এনে কাশ্মীর -হিমাচলের পাহাড়ে তুষারপাত ঘটাবে ঝঞ্ধা৷ সে সরে গেলেই তুষারছোঁয়া হাওয়া নেমে আসবে উত্তর ভারতের সমতলে৷ মধ্য ভারতের উপর সক্রিয় উচ্চচাপ বলয় সেই হিমেল বাতাসকে ঠেলে দেবে বাংলা -বিহার -ওডিশার পথে৷ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ , ঘূর্ণিঝড় না -থাকলে শুকনো হাওয়া বাধাহীন ভাবে ঢুকতেই থাকবে৷ নামবে তাপমাত্রা৷
এ বছর নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর একেবারে শান্ত৷ ঘূর্ণিঝড় নেই, নেই মামুলি নিম্নচাপও৷ সেই সুযোগেই রাজপাট শুরু হয়ে গিয়েছিল ঠান্ডা হাওয়ার৷ গোল বাঁধল অন্য জায়গায়৷ পশ্চিমি ঝঞ্ধা সংখ্যায় কমে আসায় একসময় ঠান্ডা হাওয়ার দমক কমতে শুরু করল৷ যে ক’টা এল , সেগুলিও তেমন একটা জোরালো নয়৷ যে কারণে দিল্লি -সহ উত্তর ভারতেও এ বার ঠান্ডার তীব্রতা বেশ কম৷ দুর্বল ঝঞ্ধা আসায় বিপদ বাড়ল আরও৷ তুষারপাত তেমন হল না , উল্টে ঝঞ্ধার ধাক্কায় মধ্য ভারতের উচ্চচাপ বলয় সরতে সরতে সেই পূর্ব উপকূলেই রয়ে গেল৷ যা ক্রমাগত জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাজুড়ে কুয়াশার দাপট৷ রক্ষা নেই দিনেও৷ মেঘ -মেঘ আকাশ৷ ফলে সন্ধের পর ভূপৃষ্ঠের তাপ বেরোতে না -পারায় থমকে যাচ্ছে পারাপতন৷ বুধবার কাশ্মীরের উপর থেকে একটি দুর্বল ঝঞ্ধা সরতে শুরু করেছে৷ ওডিশা উপকূলে তাই এখনও দাঁড়িয়ে উচ্চচাপ বলয়৷ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় উত্তরবঙ্গে ঘন কুয়াশার সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস৷ কুয়াশার দাপট বাড়বে কলকাতা -সহ দক্ষিণবঙ্গেও৷ যার অর্থ, আগামী ২-৩ দিন কলকাতার তাপমাত্রা ১৫ -১৬ ডিগ্রির নীচে নামার প্রায় কোনও সম্ভাবনাই নেই৷ উল্টে সন্তাহশেষে আরও ঊর্ধ্বমুখী ছুট লাগাবে পারদ৷ কেন ?আলিপুর আবহাওয়া দন্তরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা , ‘শুক্রবার নাগাদ কাশ্মীরের উপর একটি সক্রিয় ঝঞ্ধা চলে আসবে৷ তার প্রভাবে গুজরাট -রাজস্থানের উপর একটি ঘূর্ণাবর্তও সৃষ্টি হবে৷ এই ঘূর্ণাবর্ত যত দিন থাকবে , তত দিন উচ্চচাপ বলয় উপকূলেই থেকে যাবে৷ ফলে জোলো বাতাস ঢুকতেই থাকবে৷ এক্ষেত্রে ঝঞ্ধার টেনে আসা পশ্চিমি বাতাস আর পুবালি হাওয়ার সংঘর্ষে উত্তর ও মধ্য ভারতে বৃষ্টিবাদলার সম্ভাবনাও থাকছে৷ যার অর্থ, সন্তাহশেষে ঠান্ডা হাওয়ার প্রবাহ একেবারেই শক্তিশালী থাকবে না৷ ’অবশ্য ঝঞ্ধার প্রভাবে কাশ্মীরে নতুন করে তুষারপাতের সম্ভাবনা৷ অর্থাত্, ঝঞ্ধা সরে গেলেই হিম -হাওয়ার দমক ফেরার কথা৷ কিন্ত্ত এক্ষেত্রে তেমনটা হতে সময় লাগবে৷ গোকুলবাবুর কথায় , ‘ঝঞ্ধার প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তটি পূর্ব ভারতের দিকে সরে আসতে চাইবে৷ উচ্চচাপটিও উপকূল থেকে মধ্য ভারতে স্বস্থানে ফিরতে চাইবে৷ এই মুখোমুখি লড়াই যত দিন চলবে , বাংলায় জাঁকিয়ে শীত পড়া তত পিছিয়ে যাবে৷ ’বৃষ্টিবাদলা থেমে আকাশ পরিষ্কারের অপেক্ষায় থাকবে শীত৷ শীতবিলাসী বাঙালিও৷
মহানগরে পারদের নামা -ওঠা২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০১২৩৪৫৬৭৮৯১০নভেম্বরডিসেম্বর১৪১৫১৬১৭১৮১৬ .০১৪ .৯১৪ .১১৪ .৬১৫ .২১৫ .৮১৬ .৪১৬ .১১৬ .৯১৪ .৭১৫ .৪১৭ .৪১৭ .৯১৭ .৫১৫ .১১৫ .৭১৫ .৫আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷

No comments:

Post a Comment