অভিযোগ ঢের , গ্যাস ব্যবহারে রাজ্য সেই পিছিয়ে
গৃহস্থের
হেঁসেলে রান্নার গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের থেকে বেশ
খানিকটা পিছনে রয়েছে এ রাজ্য৷ সারা দেশে যেখানে গড়ে ৫৫ শতাংশ
মানুষ রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে , সেখানে পশ্চিমবঙ্গে
ব্যবহার করে মাত্র ৪৬ শতাংশ৷ সংখ্যার হিসেবে এই ৯ শতাংশের অর্থ
প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ৷ তবে বেশ কিছু রাজ্যের জনসংখ্যা যে
পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি , তা বলাই বাহুল্য৷ এ রাজ্যে রান্নার
গ্যাসের নতুন সংযোগ নেওয়ার যে চাহিদা রয়েছে , তার প্রমাণ , গত বছর
এ রাজ্যে তিনটি সংস্থা সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ নতুন গ্রাহককে
কানেকশন দিয়েছে৷ এ বছর রাজ্যে খালি সিলিন্ডারের অভাবে চার মাস
নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও পুজোর পরে ফের তা চালু হয়েছে৷ আর
তার পরে ইতিমধ্যেই প্রায় ৬ লক্ষ পরিবার গ্যাসের সংযোগ পেয়েছে৷
রান্নার গ্যাস ব্যবহারকারীদের তালিকায় থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে
পশ্চিমবঙ্গের উপরে রয়েছে মহারাষ্ট্র , উত্তরপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু৷ তবে
পশ্চিমবঙ্গে যত মানুষ রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেন , তার সিংহভাগই
কলকাতা ও তার সন্নিহিত এলাকায় বাস করেন৷ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে
রান্নার গ্যাস ব্যবহারকারীদের সংখ্যা খুবই কম৷ কেন্দ্রীয়
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রে খবর , কলকাতা দূরবর্তী জেলাগুলিতে যাঁরা
বসবাস করেন , তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই গ্যাস ব্যবহার করেন
না৷ এর মধ্যে বীরভূম , মালদা , পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার অবস্থা
সবথেকে খারাপ৷ এই সমস্ত জেলায় গ্যাসে রান্না করা মানুষের সংখ্যা
২৫ শতাংশেরও কম৷ এ রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন এই অবস্থা ?রান্নার
গ্যাস সংযোগ দেয় তিনটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী
সংস্থা ---ইন্ডিয়ান অয়েল , হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম এবং ভারত
পেট্রোলিয়াম৷ সংস্থাগুলি সূত্রে খবর , পশ্চিমবঙ্গে রান্নার গ্যাসের
‘পেনিট্রেশন ’ (অর্থাত্, মোট জনসংখ্যার যত শতাংশ মানুষ রান্নার গ্যাস
ব্যবহার করেন ) জাতীয় গড়ের থেকে কম হওয়ার পিছনে মূলত রাজ্য
প্রশাসনের ঢিলেমিই দায়ী৷ এক সংস্থার কর্তার যুক্তি , ‘আমরা
ডিস্ট্রিবিউটার নিয়োগ করে গৃহস্থের বাড়িতে রান্নার গ্যাসের সংযোগ
দিই৷ কোনও এলাকায় ডিস্ট্রিবিউটার নিযুক্ত হওয়ার পর তাকে ব্যবসা
শুরু করতে হলে রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুমতি
(এনওসি ) নিতে হয়৷ আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখছি , মধ্যপ্রদেশ , রাজস্থান
এবং অন্যান্য অনেক রাজ্যের তুলনায় এনওসি পেতে এই রাজ্যে চার -পাঁচ
গুণ বেশি সময় লাগে৷ সেই কারণে , অনেক জায়গায় রান্নার গ্যাসের
নতুন সংযোগের চাহিদা রয়েছে , এটা জেনেও ডিস্ট্রিবিউটারশিপ দেওয়া
থেকে তা কার্যত শুরু করতে করতে গড়ে দেড় বছর লেগে যায়৷ ’ রান্নার
গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরশিপের ব্যবসা শুরু করার জন্য রাজ্যের দমকল
দন্তর , ভূমি দন্তর এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভা এবং
মহকুমাশাসকের থেকে এনওসি নিতে হয়৷ এর মধ্যে জমির চরিত্র
পরিবর্তনের জন্য ভূমি দন্তরের এনওসি লাগে৷ রাজ্য প্রশাসনের লাল
ফিতের গেরোয় পশ্চিমবঙ্গে রান্নার গ্যাসের পেনিট্রেশন কম বলে অবশ্য
মানতে চাননি রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দন্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়
মল্লিক৷ এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বঞ্চনার রাজনীতির অভিযোগ তুলে তিনি
বলেন , ‘এটা ঠিক , আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ এখনও রান্নার
গ্যাস ব্যবহার করেন না৷ রান্নার গ্যাসের পেনিট্রেশন বাড়ানোর
দায়িত্ব কেন্দ্রের৷ রাজ্যে রান্নার গ্যাস যাতে আরও বেশি মানুষ
ব্যবহার করতে পারে , সেই দাবি তুলে আমি দিল্লিকে অবিলম্বে চিঠি
লিখব৷ একদিকে রাজ্যের কেরোসিনের বরাদ্দ কমাচ্ছে , অন্যদিকে গ্যাস
সিলিন্ডারও দিচ্ছে না৷ কেন্দ্রের এরকম আচরণ মানা যায় না৷ ’ যদিও
তেল সংস্থাগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে , পশ্চিমবঙ্গে গ্যাস সংযোগের
পেনিট্রেশন বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে তাদের কখনই কিছু
জানানো হয়নি৷ সূত্রের খবর , এ রাজ্যে রান্নার গ্যাস সংযোগের
পেনিট্রেশনের হার কম হওয়ার পিছনে অসামঞ্জস্য ভাবে ডিস্ট্রিবিউটারশিপ
দেওয়াও অন্যতম কারণ৷ উদাহরণস্বরূপ , মৌলালি থেকে মানিকতলা পর্যন্ত
চার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সব মিলিয়ে
২০টি ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে৷ অথচ , পুরুলিয়া , পশ্চিম মেদিনীপুর ,
বাঁকুড়ার মতো কলকাতার দূরবর্তী অনেক জেলাতেই এখনও বহু গ্রাহককে ১৫
-২০ কিলোমিটার দূরে ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে সিলিন্ডার নিয়ে আসতে
হয়৷ ইন্ডিয়ান অয়েলের জেনারেল ম্যানেজার (এলপিজি ) রবীন্দ্রনাথ
ঘোষের দাবি , ‘আমাদের লক্ষ্য , ২০১৬ -র ৩১ মার্চের মধ্যে এই
পেনিট্রেশন লেভেল বাড়িয়ে ৬০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া৷ এজন্য আমরা অনেক
নতুন ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করছি। ei samay
No comments:
Post a Comment