3
সকালবেলা দোকান খুলতে এসে হতবাক দোকানদাররা। কাঁথির সাতমাইল বাজারের এক কোণে হাজার হাজার টাকার পোড়া নোট পড়ে থাকতে দেখে জড়ো হয়ে যান অনেকে। সময় নষ্ট না করে অনেকে কুড়িয়েও নেন পোড়া নোট। মঙ্গলবার সকালে কাঁথি থানার সাতমাইল বাজারের অমল মান্নার মুদির দোকানের পাশে বেশ কিছু পাঁচশো টাকা ও হাজার টাকার পোড়া নোট পড়ে থাকতে দেখা যায়। অমলবাবুর দাবি, সোমবার রাতে তাঁর মেজ ছেলে বিশ্বজিৎ ভুলবশত দোকানে একটি কার্টনের মধ্যে রাখা টাকাগুলি পুড়িয়ে দেয়। মঙ্গলবার সকালে এসে দোকানে টাকাগুলি খোঁজার সময় পড়শি এক দোকানদার এসে দোকানের পাশে পোড়া টাকা পড়ে থাকার কথা জানান। যদিও মঙ্গলবার সারাদিনেও অমলবাবু পুলিশে খবর দেননি। বুধবার সকালে স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বিশ্বজিতকেও থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কাঁথি থানার আইসি সুবীর রায় বলেন, “পুলিশ গিয়ে ওই বাজার থেকে কিছু পোড়া নোট উদ্ধার করেছে। ওই বাজারেরই একটি মুদির দোকানের মালিক অমল মান্না টাকাগুলি নিজের বলে দাবি করেছেন। এটা নিছকই একটি দুর্ঘটনা। তবে তদন্তে সমস্ত বিষয়ই খতিয়ে দেখা হবে।” যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ওখানে কিছু পোড়া নোট উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথি থানার চড়াইখিয়া থানার বাসিন্দা অমলবাবুর পারিবারিক সূত্রেই সাতমাইল বাজারে মুদির দোকানের ব্যবসা রয়েছে। অমলবাবুর তিন ছেলে। ছোট ছেলে ভিন্ রাজ্যে থাকে। অমলবাবু বর্তমানে বড় ছেলে সুরজিৎ ও ছোট ছেলে বিশ্বজিতকে নিয়ে দোকানটি চালান। অমলবাবুর দাবি, মঙ্গলবার সকালে সুরজিতের কলকাতা থেকে দোকানের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে যাওয়ার কথা ছিল। তাই ছেলে সোমবার রাতে বাজারের জন্য ৪৩ হাজার টাকা দোকানের একটি কার্টনে রেখেছিল। দোকানের নোংরা কাগজপত্র, কার্টন প্রতিদিনই রাতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেই মতো এ দিনও বড় ছেলে না জেনে টাকার কার্টন-সহ আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে। আমরা আর রাতে টাকার বিষয়ে কোনও খোঁজও করিনি।
তাঁর আরও দাবি, মঙ্গলবার সকালে দোকান খোলার পর বিশ্বজিৎ টাকার কার্টনটি দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সেই সময় পড়শি এক ব্যক্তি ওই পোড়া টাকা পড়ে থাকার কথা জানান। তখনই আমরা বিষয়টি জানতে পারি। বিশ্বজিতেরও বক্তব্য, “দোকানের একটি কার্টনে আমি সোমবার রাতে টাকা রেখে গিয়েছিলাম। দাদা সেবিষয়ে জানত না। তাই দাদা অন্য আবর্জনার সঙ্গে ওই টাকার কার্টনটিও পুড়িয়ে দেয়।” অমলবাবুর বড় ছেলে সুরজিতেরও দাবি, সে না জেনেই ওই টাকার কার্টনটি পুড়িয়ে ফেলেছে। প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বজিৎ অত টাকা ক্যাশবাক্সে না রেখে কার্টনের মধ্যে রাখল কেন? অমলবাবুর বক্তব্য, “নিরাপত্তার কথা ভেবেই টাকাগুলো কার্টনের মধ্যে রাখা হয়েছিল।”
যদিও ওই ঘটনা ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কথায়, “এতগুলো টাকা পুড়ে গেল, এটা খুবই খারাপ ঘটনা। তবে এত টাকা কেউ কার্টনের মধ্যে রেখে কীভাবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে, সেটাও অবাক হওয়ার মতো। এর পিছনে কোনও রহস্য থাকতেও পারে।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাজারেরই এক দোকানদারের বক্তব্য, “অমলবাবু দীর্ঘদিন এই বাজারে ব্যবসা করছেন। উনি প্রবীণ মানুষ। এটা একটা দুর্ঘটনাই। এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয়।”